উপনিষদের মৌলিক তথ্য - সংস্কৃত
Upanishads - Sanskrit
উপনিষদ হলো হিন্দুধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থসমূহ, যা ‘বেদান্ত’ নামেও পরিচিত এবং জ্ঞানের চরম সন্ধানের জন্য বিখ্যাত। এই গ্রন্থাবলিতে আত্মা, পরমাত্মা, ব্রহ্ম, মায়া, মুক্তি, কর্মফলবাদ, জন্মান্তর ইত্যাদি গভীর দর্শনশাস্ত্রের আলোচনা স্থান পেয়েছে।
উপনিষদের সংজ্ঞা ও ধারণা
উপনিষদ শব্দটি এসেছে ‘উপ’(কাছে), ‘নি’(নিচে/সঠিকভাবে) এবং ‘সদ্’ (বসা/লাভ) থেকে, যার অর্থ— ‘শিক্ষালাভের জন্য গুরুর কাছে বসা’ বা ‘গুরুর শরণে গিয়ে আত্মা-ব্রহ্ম সংক্রান্ত গূঢ় জ্ঞান অর্জন’। উপনিষদকে ‘বেদান্ত’, অর্থাৎ বেদের চূড়ান্ত অংশ বলা হয়, কারণ এগুলো বেদের শেষ ভাগ হিসেবে গণ্য এবং বেদের আচার-অনুষ্ঠান ভিত্তিক ভাবধারা থেকে আধ্যাত্মিক-দার্শনিক অনুসন্ধানে উন্নীত হয়।
রচনার কাল ও সংখ্যা
উপনিষদগুলো সাধারণত দেরী বৈদিক যুগে রচিত (খ্রিস্টপূর্ব ৮০০-৫০০ অব্দ)। মোট উপনিষদের সংখ্যা ১০৮টি বলে স্বীকৃত, যদিও মূল বা প্রধান উপনিষদ হিসেবে ১০-১৩টি উপনিষদকেই বিশিষ্ট বলা হয়। মুখ্য উপনিষদগুলোর মধ্যে রয়েছে—ঐতরেয়, কঠ, কেন, ঈশ, ছান্দোগ্য, বৃহদারণ্যক, মাণ্ডূক্য, তৈত্তিরীয়, শ্বেতাশ্বতর, প্রশ্ন ও মুণ্ডক।
বিষয়বস্তুর বৈশিষ্ট্য
উপনিষদের মূল বিষয়বস্তু হলো—
- ব্রহ্ম ও আত্মা: ব্রহ্ম হলো জগতের সর্বোচ্চ সত্য ও চৈতন্যময় সত্তা; আত্মা বিত্তিগত ব্যক্তি-সত্তা; উপনিষদে বলা হয় ব্রহ্ম ও আত্মা অভিন্ন।
- মুক্তি: জীবের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ, যার মাধ্যমে জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্তি সম্ভব।
- মায়া ও কর্মফল: বিশ্বজগৎকে মায়া বা অবাস্তব বলে ব্যাখ্যা করা হয়; বাস্তবতা কেবল ব্রহ্ম-সত্তা। কর্মফল ও পুনর্জন্ম সংক্রান্ত ভাবনাও উপনিষদের অন্যতম দিক।
দার্শনিক গুরুত্ব ও দর্শন
উপনিষদ ভারতীয় দর্শন ও আধ্যাত্মিকতার ভিত্তি গড়ে দেয়। এগুলো গোপন ও গূঢ় জ্ঞানের মাধ্যমে আত্মার প্রকৃতি, বিশ্ব-রহস্য ও মুক্তির পথ ব্যাখ্যা করে। আদি শঙ্কর, মধ্ব, রামানুজ প্রমুখ দার্শনিকরা এ উপনিষদগুলোর ভিত্তিতে বিভিন্ন দর্শনশাস্ত্র গড়ে তুলেছেন।
উপসংহার
উপনিষদ ভারতীয় ধর্ম, দর্শন ও সংস্কৃতিতে অপূর্ব অবদান রেখে শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের নয়, বরং গোটা বিশ্বের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত।