ভারতের জোট সরকারের প্রধান সমস্যা হলো জোটের অভ্যন্তরীণ ঐক্যের অভাব, যা অনেক সময় সরকারের কর্মদক্ষতায় বাধা সৃষ্টি করে। কারণ, জোটে থাকা বিভিন্ন দলের স্বার্থ এবং আদর্শ একই না হওয়ায় তার নেতাদের মধ্যে বিবাদ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। এছাড়া, আসন বণ্টন এবং নেতৃত্ব নিয়ে মতবিরোধ থাকায় জোট ভাঙার মধ্য দিয়ে সংসদে অস্থিরতা বা ঝুলন্ত সংসদ (হ্যাং পার্লামেন্ট) তৈরি হয়। বিভিন্ন রাজ্যে জোট দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার ফলে রাজনীতিতে সংঘাত বেড়ে যায় এবং সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ধীর হয়ে পড়ে। বিভিন্ন রাজ্যের রাজনৈতিক দলের স্বার্থ এবং নাড়িয়া গোছানোর অসুবিধাও জোট সরকারের স্থায়িত্বহীনতার একটি বড় কারণ।
যদিও জোট সরকার অসুবিধাযুক্ত, তবুও এর কিছু সম্ভাবনাও রয়েছে। এটি সমাজের বিভিন্ন অংশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেয়, বিশেষ করে ছোট ও আঞ্চলিক দলের জন্য। জোট সরকার রাজনৈতিক ভিন্নমতগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধন স্থাপন করতে পারে যন্ত্রণা ও বৈষম্য দূরীকরণে সাহায্য করে। জাতীয় সংকটের সময় এই ধরনের সরকার দেশের অধিক রাজনৈতিক বৈধতা এবং সামাজিক শান্তি বজায় রাখতে সক্ষম। এছাড়া, আজকের ভারতের পরিবর্তিত রাজনৈতিক দৃশ্যপটে জোট সরকার জনপ্রিয়তা পাচ্ছে কারণ একটি একক দল সহজে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না। তাই জোট সরকার গঠন করে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব।
ভারতের রাজনীতিতে গত কয়েক দশকে জোট সরকারের চর্চা বেড়েছে, যা দেশের বহুদলীয় সংসদীয় ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করেছে, যদিও এর সঙ্গে অস্থিরতা ও ঝামেলাও যুক্ত।
এই সুত্রগুলো বিবেচনায় রেখে ভারতের জোট সরকারকে বোঝা যায় যে এটি একদিকে বহুমাত্রিক রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও মত-বৈচিত্র্যের প্রতিফলন, অন্যদিকে সক্রিয় রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে দেশ পরিচালনার একটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। তবে এর কার্যকারিতা জোটের নেতৃত্ব, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং স্বার্থের টানাপোড়েনের উপর নির্ভরশীল।
- সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি: ভারতের সংবিধানে সরাসরি রাজনৈতিক দলের উল্লেখ নেই, তবে সংসদীয় গণতন্ত্রের উল্লেখ থাকায় দলীয় ব্যবস্থা ও সাংগঠনিক কাঠামো তার উপরে গড়ে উঠেছে। এটি দলগুলোর উদ্ভব, প্রসার ও পরিবর্তনের মূল ভিত্তি।
- বহুমাত্রিক দলীয় বৈচিত্র্য: ভারতের দলগুলোর মধ্যে আদর্শ, কর্মসূচি, সংগঠন, নেতৃব্যক্তিত্বের বৈচিত্র্য ব্যাপক। কেউ স্থিতাবস্থা রক্ষা করতে চায়, কেউ বৈপ্লবিক পরিবর্তনে বিশ্বাসী। দলগুলি ব্যক্তিকেন্দ্রীক এবং প্রায়শই নেতার নামেই দল পরিচিত হয় যেমন কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস ইত্যাদি।
- অগণতান্ত্রিক ও কেন্দ্রীভূত কাঠামো: তত্ত্বগত ক্ষেত্রে দলগুলি গণতান্ত্রিক হলেও প্রায়োগিক জীবনে দলগুলোর অনেকটাই কেন্দ্রীভূত ও অগণতান্ত্রিক, যেখানে শীর্ষ নেতৃত্ব আদেশ প্রদান করে এবং নিম্নস্তর তাদের ওপর নির্ভরশীল।
- অন্তঃদলীয় কোন্দল ও দল বিভাজন: দলীয় কোন্দল, মতবিরোধ ও নেতৃত্ব সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের কারণে দলগুলোর ভাঙ্গন ও নতুন দলের সৃষ্টি হয়। এটি দলীয় ব্যবস্থার পরিবর্তনশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
- আঞ্চলিক দলের বিবর্তন ও জোট রাজনীতি: আঞ্চলিক স্বার্থ ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতার কারণে আঞ্চলিক দলের সূচনা হয়, যারা নির্দিষ্ট অঞ্চলের সমস্যা নিয়ে কাজ করে। এই সংস্থা জোট গঠন করে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জোট সরকার অনেক সময় অস্থায়ী ও ভঙ্গুর হতে দেখা যায়।
- বিরোধী দলের দুর্বলতা: শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাব থাকার কারণে একক দল বা জোট সরকারের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়।
- সাম্প্রদায়িক ও বিশেষ স্বার্থের দল: ধর্মনিরপেক্ষতা সত্ত্বেও কিছু দল ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে ভূমিকা রাখে।
এই বৈশিষ্ট্যের কারণে ভারতের দলীয় ব্যবস্থা একটি গতিশীল, জটিল ও বহুমাত্রিক রাজনৈতিক কাঠামো হিসেবে বিবেচিত হয়, যা সময়ের সাথে সাথে নতুন রাজনৈতিক দিক ও মাত্রা গ্রহণ করছে।
সারাংশে, ভারতের দলীয় ব্যবস্থা শুধুমাত্র একটি বহুদলীয় ব্যবস্থাই নয়, এতে সাংগঠনিক, আদর্শগত, আঞ্চলিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রীক পরিবর্তনের বহুমাত্রিক মাত্রা রয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক জীবনে পরিবর্তন ও স্থিতিশীলতার মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে।
ভারতের দল ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্ গুলি আলোচনা করে।
Ans: ভারতের দল ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ—
১. বহুদলীয় ব্যবস্থা
ভারতে নানা রাজনৈতিক দল রয়েছে—জাতীয় ও আঞ্চলিক স্তরে—যা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও বিকল্পের পরিবেশ তৈরি করে থাকে।
২. জাতিগত, ধর্মীয় ও ভাষাগত ভিত্তি
ভারতের দলগুলি প্রায়শই নির্দিষ্ট ভাষাভাষী, জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায়ের স্বার্থে গড়ে ওঠে। এতে দেশজুড়ে দলগুলির বৈচিত্র্য স্পষ্ট হয়।
৩. জাতীয় ও আঞ্চলিক দল
ভারতে দুই ধরনের রাজনৈতিক দল বিদ্যমান: জাতীয় দল (যেমন—ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা পার্টি) এবং আঞ্চলিক দল (যেমন—ত্রিনমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি)।
৪. আদর্শগত বৈচিত্র্য ও নেতৃত্বনির্ভরতা
দলগুলির নিজস্ব রাজনৈতিক মতবাদ ও নীতি থাকে, তবে অনেক দল নেতা-কেন্দ্রিক হয়ে ওঠে যা পরিবারতন্ত্র ও ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভরতা বাড়িয়ে তোলে।
৫. দল-পরিবর্তন ও বিভাজনপ্রবণতা
প্রায়ই দলীয় কারণে বা ব্যক্তি স্বার্থে বিরোধী পক্ষ থেকে দল বদলের প্রবণতা (দলত্যাগ) দেখা যায়। ছোটো ছোটো নতুন দলশ্রেণিও গড়ে ওঠে মাঝে মাঝে।
৬. নির্বাচনমুখীতা ও ক্ষমতালোভ
দেশের দলগুলো নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতা অর্জন এবং সংরক্ষণকেই উদ্দেশ্য বলে মনে করে। বিভিন্ন জোট গঠন ইত্যাদি এক্ষেত্রে সাধারণ বিষয়।
৭. দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্য ও সরকার গঠনে জোট
এত বেশি সংখ্যক দল থাকায় বারবার জোট সরকার গঠনের প্রয়োজন হয়, যা একদিকে বৃহত্তর প্রতিনিধিত্ব দেয়, অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগুলিই ভারতের দল ব্যবস্থার মূল চিত্র উপস্থাপন করে এবং এগুলি ভারতের গণতন্ত্রের শক্তি ও দুর্বলতা উভয়কেই নির্দেশ করে।
ভারতের রাজনীতিকে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্ম কিভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা আলোচনা কর।
অথবা,ভারতীয় রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব উল্লেখ কর।
Ans: ভারতের রাজনীতিকে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী এক ভূমিকা পালন করে থাকে। ভারতের মতো বহুধর্মীয় ও বহু-সাংস্কৃতিক দেশে ধর্মীয় পরিচয়, মূল্যবোধ এবং আচার-অনুষ্ঠান রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও দলীয় কৌশলের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত।
রাজনৈতিক দল ও ধর্ম
ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেমন ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP), কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি প্রভৃতি নিয়মিতভাবে ধর্মীয় ইস্যুকে রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ করে তোলে। বিশেষ করে BJP নিজেদেরকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে উপস্থাপন করে এবং ‘হিন্দুত্ব’ আদর্শ সামনে রাখে, যা সরাসরি ধর্মের ভিত্তিতে রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটায়।
নির্বাচনী প্রচারে ধর্মীয় উৎসব, প্রতীক, এবং সম্প্রদায়সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতির ব্যবহার ব্যাপক। দলসমূহ নানা সময়ে সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক, মন্দির-মসজিদ বিতর্ক বা ধর্মীয় অনুভূতিকে উস্কে দেয়, যার সদর্থক ও ঋণাত্মক—দুই ধরণের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব পড়ে।
আইনি ও সাংবিধানিক দিক
ভারতের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা উল্লেখ থাকলেও, ব্যক্তিগত আইন (personal law), জাত-কর্ম-সম্পর্কিত সংরক্ষণ (reservation), ধর্মান্তর (conversion)—এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বারংবার রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ, ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ নিয়ে আলোচনা মূলত ধর্মীয় ভিত্তিতে বিভক্ত ভারতীয় সমাজকে সংহত করার চেষ্টা।
ভোটব্যাংক ও গণতন্ত্র
ভারতীয় ভোটব্যাংক রাজনীতিতে ধর্ম প্রধান এক ফ্যাক্টর। দলগুলো এক বা একাধিক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভোট পেতে স্থানীয় বা জাতীয় স্তরে জোট গঠন করে, ধর্মভিত্তিক প্রচার চালায়, এবং কখনো কখনো দাঙ্গা, সংঘর্ষ, বা ধর্মীয় মেরুকরণের মাধ্যমে ‘পোলারাইজেশন’ ঘটানোর চেষ্টা করে।
সম্প্রতি উদাহরণ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অযোধ্যা রাম মন্দির নির্মাণ, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (CAA), তিন তালাক, গো-রক্ষা আইন, ধর্মীয় স্থানসমূহের রাজনীতি, ও হিজাব বিতর্ক রাজনৈতিক এজেন্ডায় ধর্মের প্রভাব তুলে ধরেছে।
সামাজিক প্রভাব
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি একদিকে গরিব, সংখ্যালঘু, মহিলা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে সরকারি নীতি এবং সুযোগ সুবিধায় প্রভাব ফেলে, অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সহনশীলতা ও গণতান্ত্রিক চেতনা দুর্বল করে দেয়।
ভারতের রাজনীতিতে ধর্ম কেবল পরিচয়ের নিদর্শন নয়, বরং তা নীতিনির্ধারণ, সামাজিক মেরুকরণ এবং রাষ্ট্রনীতি—সব ক্ষেত্রেই ফলপ্রসূ ও জটিল এক প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
ভারতের সংখ্যালঘু সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়িকতার উপর বিতর্ক বিশ্লেষণ কর।
Ans: ভারতের সংখ্যালঘু-সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়িকতা নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের এবং বহুমাত্রিক। এই বিতর্কের মূল দিকগুলো হলো—
ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম সংখ্যাগরিষ্ঠবাদ
ভারতের সংবিধানে ১৯৭৬ সালের ৪২তম সংশোধনীর পরে ধর্মনিরপেক্ষতা স্পষ্টভাবে ঘোষিত হলেও, বাস্তবে ধর্ম ও রাষ্ট্রের সংযোগ আজও বিদ্যমান। বহু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, মুসলিম আইন ও বিশেষ পদক্ষেপগুলির কারণে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আবার হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ 'সংখ্যালঘুদের তোষণ' এর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও সংখ্যালঘুর অবস্থান
ভারতে সাম্প্রদায়িকতা বিশেষ করে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের চলমান উত্তেজনা অনেক ক্ষেত্রেই গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হিংসা বা মব লিঞ্চিংয়ের ঘটনা যেমন বাড়ছে, তেমনই বৃ্দ্ধি পাচ্ছে সংখ্যালঘুদের আশঙ্কা ও প্রান্তিকতা। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে যেখানে ৩২টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছিল, ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৫৯টিতে দাঁড়িয়েছে, যা বেশ বড় সঙ্কেত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকাশ্য স্থান দখল, প্রশাসনিক পক্ষপাত, এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও স্বার্থ আরো দুর্বল করছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব ও ক্ষমতায়ন খুবই সীমিত; তাদের সামাজিক মর্যাদা ও সম্পদেও অসাম্য লক্ষণীয়। নীতি নির্ধারণ এবং নির্বাচনে সংখ্যালঘু সমাজ প্রায়ই উপেক্ষিত হয় বা শুধু ভোট ব্যাংক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠদের একাংশ ধর্মনিরপেক্ষতাকে কেবল সংখ্যালঘু তুষ্টিকরণ বলেই মনে করে, যা বিভাজনমূলক মনোভাবকে প্রশ্রয় দেয়।
সাম্প্রতিক বিতর্ক ও প্রবণতা
সংখ্যালঘুদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে এবং আইনি সুরক্ষার অভাব দৃশ্যমান।
হিন্দুত্ববাদ ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ বাড়ার কারণে সংখ্যালঘু সমাজ অধিকতর প্রান্তিক হচ্ছে।
সমাজে সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে এবং জাতীয় ঐক্য বিঘ্নিত হচ্ছে বলে বহু সমাজবিজ্ঞানী মনে করেন।
উপসংহার
ভারতে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়িকতার বিতর্ক গভীর ও চলমান। প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার প্রশ্ন এবং সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা — এ দুইয়ের মাঝে ভারতের গণতান্ত্রিক সমাজকে ভারসাম্য খুঁজে নিতে হচ্ছে।
ভারতের নির্বাচন কমিশনের গঠন কার্যকারিতা এবং ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা ভারতের নির্বাচন কমিশনের গঠন কার্যকারিতা এবং বিশ্লেষণ কর।
Ans: ভারতের নির্বাচন কমিশনের গঠন, কার্যকারিতা এবং ভূমিকা
গঠন
ভারতের নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India) একটি স্বশাসিত সাংবিধানিক সংস্থা, যা ২৫শে জানুয়ারি ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতীয় সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে এই কমিশন গঠিত হয়েছে৷ কমিশন প্রধানত তিনজন সদস্য নিয়ে গঠিত – একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং দুইজন নির্বাচন কমিশনার। এঁদের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করেন, এবং কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তই কার্যকর হয়। নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সাধারণত ছয় বছর বা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত, যেটি আগে আসে, দায়িত্ব পালন করেন।
কার্যকারিতা
নির্বাচনের তত্ত্বাবধান, ব্যবস্থা ও নিয়ন্ত্রণ: লোকসভা, রাজ্য বিধানসভা, রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পরিচালনার জন্য পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান, নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ কমিশনের হাতে থাকে৷
নির্বাচনী পরিষদের সীমানা নির্ধারণ: জনগণনা অনুসারে প্রতি দশ বছর অন্তর কেন্দ্র সীমা পুনর্নির্ধারণ এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে৷
নির্বাচনী তালিকা প্রস্তুতি ও রক্ষণাবেক্ষণ: ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করে এবং ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে৷
প্রার্থীদের মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ: রাজনৈতিক দল ও নির্দল প্রার্থীদের নির্বাচন প্রতীক নির্ধারণ এবং দলকে স্বীকৃতি প্রদান করে৷
নির্বাচনী আচরণবিধি: ভোট, প্রচার, ব্যয়ের সীমারেখা ও আচরণবিধি নির্ধারণ ও তার প্রয়োগ নিশ্চিত করে৷
নির্বাচনী প্রযুক্তি: বৈদ্যুতিন ভোট মেশিন, ভোটার শিক্ষা এবং সচেতনতার উপর গুরুত্ব দেয়৷
অনিয়ম দমনে ব্যবস্থা: সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে ভোটগ্রহণ স্থগিত, বাতিল বা পুনঃনির্ধারণের ক্ষমতা রাখে।
ভূমিকা
স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন: দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে অবাধ ও স্বচ্ছ রাখে।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও গণতন্ত্রের সুরক্ষা: সংবিধান ও নির্বাচনী আইনের অধীন থেকে অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রতিহত করে।
নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি: ভোটের গুরুত্ব বোঝাতে এবং গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে ভিন্ন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে।
বিচারিক ও উপদেষ্টা ক্ষমতা: সদস্য অযোগ্য হলে সুপারিশ পাঠানো, নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগ বিচারবিভাগীয়ভাবে নিষ্পত্তি করা ইত্যাদি।
সংক্ষেপে
ভারতের নির্বাচন কমিশন হচ্ছে এমন একটি স্বাধীন সংস্থা, যা দেশের জনগণের জন্য গণতন্ত্রের ভিত্তি রক্ষা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরাপদ রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। এটি রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থেকে নির্বাচন পরিচালনা করে এবং নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে।
ভারতীয় সংবিধানে সংশোধন পদ্ধতি আলোচনা কর। এটি কি সংবিধানকে নমনীয় করে তুলেছে।
Ans: ভারতীয় সংবিধানে সংশোধন পদ্ধতি প্রধানত ধারা ৩৬৮ অনুসারে অনুষ্ঠিত হয় এবং এটি তিন ধরনের পদ্ধতিতে করা যায়:
১. প্রথম পদ্ধতি:
- সেই পদ্ধতিতে যে কোনও সংসদের কোনও কক্ষে সংশোধনী প্রস্তাব আনা যায়।
- সংশোধনী প্রস্তাব সংসদের উভয় কক্ষে অন্যান্য আইন পাসের মতোই সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং উপস্থিত সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশের মাধ্যমে পাশ করতে হয়।
- এরপর রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রাপ্ত হলে সংবিধান সংশোধিত হয়।
- এই পদ্ধতিতে সাধারণ বিষয় যেমন মৌলিক অধিকার, রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি সংশোধন করা যায়।
২. দ্বিতীয় পদ্ধতি:
- এটি অপেক্ষাকৃত জটিল।
- প্রথমে সংসদের উভয় কক্ষে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সহ পাশ করতে হয়, তারপর অন্তত অর্ধেক রাজ্য বিধানসভার অনুমোদন প্রয়োজন।
- রাজ্য বিধানসভা কেবল সমর্থন বা প্রত্যাখ্যান করতে পারে, কোন পরিবর্তন করতে পারে না।
- রাজ্যগুলোর অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলে সংশোধন কার্যকর হয়।
- এই পদ্ধতি প্রধানত কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ইত্যাদি বিষয় সংশোধনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৩. তৃতীয় পদ্ধতি:
- এটি সরল এবং সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে পার্লামেন্টের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে সংশোধন সম্ভব।
- মূলত নতুন রাজ্য সৃষ্টি, নাগরিকত্ব, বিধান পরিষদের সৃষ্টি বা বিলোপ, সংসদ সদস্যদের বিশেষাধিকার, ভাষা ও সুপ্রিম কোর্টের এলাকার সম্প্রসারণের মতো বিষয় এই পদ্ধতিতে সংশোধন করা হয়।
সংবিধান সংশোধনের এই পদ্ধতিগুলো ভারতীয় সংবিধানকে একটি বিশেষ নমনীয়তা প্রদান করেছে। অর্থাৎ, দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং প্রয়োজনীয় আইনগত পরিবর্তন আনার সুযোগ রয়েছে।
তবে, এই নমনীয়তার সীমানা রয়েছে যেমন সংবিধানের মৌলিক কাঠামো (basic structure) ভাঙার চেষ্টা সঠিক নয় বলে সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছে। ফলে সংবিধান একদিকে নমনীয় হলেও মৌলিক কাঠামোগত অংশে অনমনীয়তা রক্ষিত হয়।
সার্বিকভাবে, ভারতীয় সংবিধান একটি সংমিশ্রণ যার মাধ্যমে এটি নমনীয় ও অনমনীয় দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, যা দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রেখেই পরিবর্তনের পথ সুগম করে দিয়েছে.
তুমি কি মনে করো যে ভারতের সংবিধান কঠোরতা ও নমনীয়তার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে ভারতের সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতি উল্লেখ করে আলোচনা কর।
Ans: ভারতের সংবিধান একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যা কঠোরতা ও নমনীয়তার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। অর্থাৎ সংবিধান এত কঠোর নয় যে তাকে বদলানো অসম্ভব, আবার এত নমনীয় নয় যে হঠাৎ করেই সহজে পরিবর্তন করা যায়। এই ভারসাম্য ভারতের সংবিধানকে স্থায়িত্ব এবং প্রাসঙ্গিকতা দুই দিক থেকেই সুসংহত করে।
কঠোরতা এবং নমনীয়তার ভারসাম্য
কঠোরতা: ভারতের সংবিধানের কিছু সংশোধন প্রক্রিয়া কঠিন এবং জটিল। যেমন, সংবিধানের তৃতীয় অংশ সংশোধনের জন্য সাংবিধানিক সংশোধনী বিল সংসদের উভয় গৃহেই সাধারণত ২ তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। আর কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যসভায়ও বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়। এতে সংবিধান সহজে পরিবর্তিত হয় না, যা স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা দেয়।
নমনীয়তা: একই সঙ্গে কিছু ধারা সংশোধন তুলনামূলকভাবে সহজ, শুধুমাত্র সংসদের দুই ঘরেই সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশগুলোর মতো যেখানকার সংবিধান খুব কঠোরভাবে সংশোধন করা হয় না, সেখানে ভারতের সংবিধান তুলনামূলক নমনীয়তা বজায় রাখে।
ভারতের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি
ভারতের সংবিধান সংশোধনের নিয়ম আর্টিকেল 368 এর অধীনে উল্লেখ রয়েছে। এখানে সংশোধনের বিভিন্ন ধাপ এবং তার প্রকারভেদ আলোচনা করা হয়েছে:
সরল সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা সংশোধন: যেমন সাধারণ আইন প্রণয়নের মতো। সংবিধানের কিছু অংশ সংশোধন এই পদ্ধতিতে হয় (যেমন আর্টিকেল 4 অনুযায়ী)।
উভয় পরিবারের ২/৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা সংশোধন: অধিকাংশ ধারা সংশোধন এই পদ্ধতিতে হয়। সংসদের লোকসভা এবং রাজ্যসভায় ২/৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অনিবার্য।
উভয় সংসদের ২/৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যসভায় মাইনিমাম অর্ধেক রাজ্যের অনুমোদন: বিশেষ করে যেখানে রাজ্যের স্বার্থ জড়িত আছে, যেমন কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক, রাজ্যের সীমা সংক্রান্ত ধারা সংশোধনে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।
লোকসভা ও রাজ্যসভায় ভালো সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে রাজ্যের অর্ধেকের অনুমোদন প্রয়োজন: দেশের গঠন বা রাজনৈতিক কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে এই বিধি প্রযোজ্য।
এভাবে ভারতীয় সংবিধান কঠোর ও নমনীয়তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে, সংশোধন প্রক্রিয়াটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে রক্ষা করে এবং পরিবর্তনের প্রয়োজনে প্রাসঙ্গিকভাবে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়.
আপনি যদি ভারতের সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া বাংলায় আরও বিস্তারিত জানতে চান, আমি সেগুলোও আলোচনা করতে পারি।
ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সংরক্ষণের বিষয়টি আলোচনা কর ভারতের সংবিধানের তপশিলি জাতি উপজাতি এবং অন্যান্য অনুগ্রসর শ্রেণী সম্পর্কিত বিধান গুলি কি কি?
Ans: ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সংরক্ষণের বিষয়টি প্রধানত সংবিধানের নানা ধারায় নির্ধারিত হয়েছে যা মূলত তপশিলি জাতি (Scheduled Castes), উপজাতি (Scheduled Tribes), এবং অন্যান্য অনুগ্রসর শ্রেণীর (Other Backward Classes বা OBC) জন্য বিশেষ সুযোগ ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে কাজ করে।
ভারতীয় সংবিধানের সংরক্ষণ সম্পর্কিত ব্যবস্থাসমূহ:
তপশিলি জাতি (Scheduled Castes) ও উপজাতি (Scheduled Tribes):
সংবিধানের ধারা 341 অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্দিষ্ট করে দেন কোন সমাজ, জাতি বা উপজাতি তপশিলি জাতির অন্তর্ভুক্ত হবে।
ধারা 342 অনুসারে একইভাবে উপজাতি নির্ধারণ করা হয়।
এই শ্রেণীগুলির জন্য সংসদ ও বিধানসভায় প্রতিনিধিত্বের জন্য বিভিন্ন আসন সংরক্ষিত থাকে (Article 330, Article 332)।
তপশিলি জাতি ও উপজাতির সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শোষণ থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে।
Article 17 অনুযায়ী 'অস্পৃশ্যতা' (Untouchability) বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং এর যে কোনও রূপ নিষিদ্ধ।
Article 46-এ বলা হয়েছে রাষ্ট্রকে তপশিলি জাতি ও উপজাতির শিক্ষাগত ও আর্থিক উন্নয়নে বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
অন্যান্য অনুগ্রসর শ্রেণী (Other Backward Classes - OBC):
সংবিধানের Article 15(4) এবং Article 16(4) অনুযায়ী সামাজিক এবং শৈক্ষিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জন্য শিক্ষায়, সরকারি চাকরি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সংরক্ষণ দিতে পারে রাষ্ট্র।
১৯৯৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার OBC-দের জন্য সরকারি চাকরি ও শিক্ষায় প্রায় ২৭% সংরক্ষণ চালু করে।
এছাড়া, Article 15(5) অনুযায়ী ব্যক্তিগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সংরক্ষণের বিধান আনা হয়েছে।
২০১৯ সালের ১০৩তম সংশোধনের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল (Economically Weaker Sections - EWS) জন্যও ১০% সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
রাজনৈতিক সংরক্ষণ:
লোকসভার এবং বিধানসভায় তপশিলি জাতি ও উপজাতির জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষিত থাকে।
এই সংরক্ষণ প্রতি দশ বছরে পর্যালোচনা (Review) করা হয় কিন্তু এটি বাতিল হয় না।
সংরক্ষণ শুধু সাংসদ বা বিধায়ক পদেই সীমাবদ্ধ নয়, সরকারি চাকরি, শিক্ষা এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এই ব্যবস্থার শ্রেণিবিন্যাস আছে।
সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা ও বিধানসমূহ:
ধারা বিষয়
Article 15(4) সামাজিকভাবে ও শিক্ষাগতভাবে অনুগ্রহ প্রয়োজন শ্রেণীর জন্য সংরক্ষণ।
Article 15(5) ব্যক্তিগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সংরক্ষণের বিধান।
Article 16(4) সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ।
Article 17 untouchability বিলোপ।
Article 330 লোকসভার মধ্যে তপশিলি জাতি ও উপজাতির জন্য সংরক্ষণ।
Article 332 রাজ্য বিধানসভায় তপশিলি জাতি ও উপজাতির সংরক্ষণ।
Article 341 তপশিলি জাতির সংজ্ঞা ও তালিকা।
Article 342 উপজাতির সংজ্ঞা ও তালিকা।
Article 46 তপশিলি জাতি ও উপজাতির শিক্ষাগত ও আর্থিক উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রের বিশেষ যত্ন।
এই ধারা ও বিধানগুলোর মাধ্যমে ভারত সরকার সামাজিক ন্যায়বিচার ও দলিত-আদিবাসী ও অনন্য জাতিগোষ্ঠীর উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত পদক্ষেপ নেয়। সংরক্ষণ ব্যবস্থা মূলত তাদের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি তাদের সমাজে শ্রেণিগত বৈষম্য দূরীকরণের একটি প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে.
ভারতের নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ প্রসারে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ আলোচনা কর।
অথবা ভারতীয় রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি ব্যাখ্যা কর।
Ans: ভারতের নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ প্রসারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে, যা নারীদের ক্ষমতায়ন এবং তাদের রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপে সমান অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে। নিচে এই পদক্ষেপগুলোর প্রধান দিকগুলো আলোচনা করা হলো:
সংবিধানে সংরক্ষিত আসন (Reservation of Seats):
ভারতের সংবিধান বর্তমানে স্থানীয় (পঞ্চায়েত) পর্যায়ে নারীদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষণ করেছে। অর্থাৎ, গ্রামীণ ও শহুরে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে নারীরা কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ আসনে অংশ নিতে পারেন। এই পদক্ষেপ নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়িয়েছে এবং নেতৃস্থানীয় ভূমিকা নিতে সাহায্য করেছে।
নারী নেতৃত্ব উন্নয়ন প্রকল্প:
বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার নারীদের নেতৃত্ব বিকাশের জন্য প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা কর্মসূচি চালু করেছে, যা নারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজে দক্ষ করে তোলে।
নারী সুরক্ষা এবং সহায়তা আইন:
রাজনৈতিক পরিবেশে নারীদের নিরাপত্তা এবং সম্মান বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন আইন যেমন হল না থাকার প্রয়াস, যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণে উৎসাহ প্রদান করে।
রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ:
অনেক রাজনৈতিক দল স্বেচ্ছাসেবক স্তর থেকে নারীদের অতিরিক্ত সুযোগ দিচ্ছে এবং দলে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। নারীদের জন্য বিশেষ ইভেন্ট, সেমিনার ও নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়েছে।
শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধিঃ
নারীদের জন্য শিক্ষার সুবিধা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
নারী মিত্র সংস্থা ও এনজিও:
বহু এনজিও এবং নারী অধিকার আন্দোলনকারীরা নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের জন্য প্রশিক্ষণ, পরামর্শ এবং সহায়তা প্রদান করে আসছে।
এই পদক্ষেপগুলো মিলিয়ে ভারতের নারী রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে এবং নারীরা সমাজের সকল স্তরে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তবে, নারীদের সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য এখনও বিভিন্ন স্তরে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
ভারতীয় রাজনীতিতে জাতির ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা,জাতিকে ভারতীয় রাজনীতিতে জাতির ব্যবস্থার ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
অথবা,ভারতীয় রাজনীতিতে জাতপাতের ভূমিকা আলোচনা কর।
Ans: ভারতীয় রাজনীতিতে জাতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমাত্রিক। জাতি বা জনগোষ্ঠী মূলত একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় যা ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস ইত্যাদি ভিত্তিতে গঠিত হয়। ভারত একটি বহুজাতিক, বহুভাষিক এবং বহুসাংস্কৃতিক দেশ যেখানে বিভিন্ন জাতি একত্রে বাস করে। এর ফলে জাতির ভূমিকা ভারতের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিশেষ গুরুত্ব পায়।
১. রাজনৈতিক সংগঠনে জাতির প্রভাব
ভারতে জাতিগত পরিচয় রাজনৈতিক দল গঠনের এবং নির্বাচনী কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক রাজনৈতিক দল নির্দিষ্ট জাতি বা সম্প্রদায়কে প্রধানভিত্তি করে গঠিত হয় বা তাদের সমর্থন পেতে চেষ্টা করে। যেমন, রাজ্য পর্যায়ে বিভিন্ন জাতির আধিপত্যের কারণে রাজনীতিতে তাদের প্রতিনিধিত্ব বড় ভূমিকা রাখে।
২. নির্বাচনী রাজনীতি এবং জাতি
নির্বাচনী রাজনীতির ক্ষেত্রে জাতিগত সমর্থন একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়। ভোটদাতারা প্রায়ই জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে ভোট দেয়, যার ফলে রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলি জাতিগত মসৃণতা রক্ষা বা জাতিগত প্রাধান্য অর্জনে কাজ করে।
৩. জাতিগত সম্প্রীতি ও সংঘাত
জাতিগত বিভাজন কখনো কখনো রাজনীতিতে সংঘাত ও বিভাজনের কারণও হতে পারে, বিশেষ করে যখন নির্দিষ্ট জাতি বা সম্প্রদায়রা নিজেদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠান বা HAM এর মাধ্যমে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে। তবে ভারতের সংবিধান ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জাতিগত সাম্যবিচার ও সমপ্রীতি বজায় রাখার জন্য নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যেমন সংরক্ষিত আসন।
৪. জাতি এবং রাজ্য রাজনীতি
বিভিন্ন রাজ্যে নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রাধান্য এবং দাবি থাকায় রাজ্য রাজনীতিতে জাতির ভূমিকা আরও প্রাধান্য পায়। অনেক সময় জাতিগত স্বার্থ সংরক্ষণ করেই রাজ্য পর্যায়ে রাজনৈতিক আন্দোলন এবং সরকার গঠন হয়।
৫. সংবিধান এবং জাতি
ভারতের সংবিধান জাতির পরিচয়কে স্বীকৃতি দিয়ে জাতিগত সম্প্রীতি, সাম্য ও সংহতির উপর গুরুত্ব দেয়। সংবিধানে জাতিগত ও ভাষাগত সম্প্রদায়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের সংরক্ষণমূলক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা জাতিগত স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে সহায়ক।
সারাংশে, ভারতীয় রাজনীতিতে জাতির ভূমিকা হলো একটি প্রভাবশালী ও প্রগাঢ় ব্যাপার যা রাজনৈতিক দল, নির্বাচনী কৌশল, সামাজিক সম্প্রীতি এবং শাসনিক নীতির মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক চিত্রকে গঠন করে এবং প্রভাবিত করে। জাতিগত বৈচিত্র্য থাকায় ভারতীয় রাজনীতি জটিল ও বহুস্তরীয়, যেখানে জাতিগত সমর্থন ও সম্প্রীতি রক্ষা একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং প্রয়োজনীয়তাও বটে।
শ্রেণী ও জাতির মধ্যে পার্থক্য লেখ।
Ans: শ্রেণী (class) এবং জাতি (caste) দুটি ভিন্ন সামাজিক স্তরবিন্যাসের ধারণা। শ্রেণী মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে গঠিত, যেখানে ব্যক্তির আয়, শিক্ষা, পেশা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে, জাতি জন্মসূত্রে নির্ধারিত এবং সাধারণত ঐতিহ্য ও রীতিনীতি দ্বারা আবদ্ধ থাকে।
শ্রেণী ও জাতির মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি হল:
গঠন:
শ্রেণী সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে গঠিত হয়, যেখানে ব্যক্তিরা তাদের সম্পদ, ক্ষমতা এবং পেশার ভিত্তিতে শ্রেণীতে বিভক্ত হয়। জাতি, জন্মসূত্রে নির্ধারিত এবং ঐতিহ্য ও রীতিনীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত।
পরিবর্তনশীলতা:
শ্রেণী পরিবর্তনশীল, অর্থাৎ একজন ব্যক্তি তার জীবনকালে এক শ্রেণী থেকে অন্য শ্রেণীতে যেতে পারে। কিন্তু জাতি সাধারণত অপরিবর্তনীয়, একবার একটি জাতিতে জন্মগ্রহণ করলে, সেই জাতিতেই জীবন কাটাতে হয়।
বদ্ধতা:
জাতি ব্যবস্থা সাধারণত কঠোরভাবে আবদ্ধ থাকে, যেখানে ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা ও পেশা নির্ধারিত হয় তার জাতি দ্বারা। শ্রেণী ব্যবস্থায় এই বন্ধন তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়।
ঐতিহ্য ও রীতিনীতি:
জাতি প্রথা ঐতিহ্য ও রীতিনীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত এবং ব্যক্তির জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। শ্রেণী প্রথায় এই ধরনের কঠোর ঐতিহ্য ও রীতিনীতি দেখা যায় না।
উদাহরণ:
ভারতে জাতি প্রথা একটি পরিচিত উদাহরণ, যেখানে ব্যক্তিরা তাদের জন্মসূত্রে একটি জাতিতে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা, পেশা ইত্যাদি জাতি দ্বারা নির্ধারিত হয়। শ্রেণী প্রথা সাধারণত পশ্চিমা সমাজে বেশি দেখা যায়, যেখানে ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক অবস্থা তার জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে।
সংক্ষেপে, শ্রেণী একটি পরিবর্তনশীল সামাজিক স্তর যা অর্থনৈতিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে গঠিত, যেখানে জাতি একটি জন্মসূত্রে নির্ধারিত এবং ঐতিহ্য ও রীতিনীতি দ্বারা আবদ্ধ সামাজিক স্তর।
ভোটদানের আচরণে শ্রেণীর নির্ধারক ভূমিকা লেখ।
Ans: ভোটদানের আচরণে শ্রেণীর ভূমিকা
ভোটদানের আচরণ বলতে বোঝায়—কোনো সমাজে ভোটাররা নির্বাচনকালে কাকে ভোট দেবেন, কিসে প্রভাবিত হবেন এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় কীভাবে অংশগ্রহণ করবেন। এর মধ্যে শ্রেণীভিত্তিক প্রভাব একটি মৌলিক নির্ধারক।
১. অর্থনৈতিক অবস্থান ও স্বার্থ
সমাজে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণী ভিন্ন ভিন্ন অর্থনৈতিক অবস্থানে থাকেন।
নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবীরা প্রায়শই সেই রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শকে সমর্থন করে, যারা সামাজিক ন্যায়, কর্মসংস্থান ও ভর্তুকি প্রদান করে।
অন্যদিকে উচ্চবিত্তরা সাধারণত সেই নীতি বা দলকে সমর্থন করে যারা স্বাধীন উদ্যোগ, পুঁজি সুরক্ষা, কর হ্রাস ইত্যাদিকে অগ্রাধিকার দেয়।
২. শ্রেণী-চেতনা
একই শ্রেণীর মানুষদের মধ্যে প্রায়ই এক ধরনের সাধারণ স্বার্থ ও চেতনা জন্ম নেয়। গ্রামাঞ্চলের কৃষক, শহরের শ্রমিক বা মধ্যবিত্ত পেশাজীবী ভিন্ন ভিন্ন দল ও নেতৃত্বকে সমর্থন করেন কারণ তাঁদের স্বার্থ ভিন্ন।
৩. দলীয় আনুগত্য
অনেক সময় শ্রেণী অনুযায়ী ভোটারদের দলীয় আনুগত্যও স্থায়ী হয়। যেমন—শ্রমিক শ্রেণী সাধারণত শ্রমিকপন্থী বা বামঘেঁষা দলকে সমর্থন করে থাকে, আবার ব্যবসায়ী শ্রেণী ডানপন্থী বা মুক্তবাজারপন্থী দলকে সমর্থন করে।
৪. সামাজিক গতিশীলতা
যখন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এক শ্রেণী থেকে আরেক শ্রেণীতে স্থানান্তরিত হয় (যেমন অর্থনৈতিক উন্নতির মাধ্যমে নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত হওয়া), তখন তাঁদের ভোটদানের ধরনও পরিবর্তিত হতে পারে।
৫. ভারতীয় (বাংলাদেশ/ভারত) প্রেক্ষাপটে
গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র কৃষক বা দিনমজুররা সাধারণত জনকল্যাণমূলক প্রতিশ্রুতির প্রতি আকৃষ্ট হন।
শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণী নীতি, স্থিতিশীলতা ও কর্মসংস্থানের উপর গুরুত্ব দেন।
উচ্চবিত্ত বা সম্পদশালী শ্রেণী আবার রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতি, ব্যবসার পরিবেশ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে প্রাধান্য দেন।
উপসংহার
শ্রেণী বা আর্থ-সামাজিক অবস্থান ভোটদানের আচরণকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। যদিও ধর্ম, জাতি, ভাষা, আঞ্চলিকতা, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদিও ভোটদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তবুও শ্রেণী প্রশ্ন ভোটারদের রাজনৈতিক ঝোঁক ও সিদ্ধান্তকে দীর্ঘমেয়াদে গভীরভাবে নির্ধারণ করে।
সংখ্যালঘু বনাম সংখ্যাগরিষ্ঠতা।
Ans: সংখ্যালঘু বনাম সংখ্যাগরিষ্ঠতা বলতে সাধারণত একটি সমাজ, গোষ্ঠী বা জাতিতে দুটি প্রধান সমষ্টির মধ্যে পার্থক্য বোঝানো হয় যেখানে একটি গোষ্ঠী সংখ্যায় কম এবং অপরটি সংখ্যায় বেশি।
সংজ্ঞা
সংখ্যালঘু (Minority): সংখ্যায় কম এবং প্রায়শই সামাজিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কম সুবিধাপ্রাপ্ত গোষ্ঠী। সংখ্যালঘু গোষ্ঠী জাতিগত, ধর্মীয়, ভাষাগত বা সাংস্কৃতিক ভিত্তিতে হতে পারে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ (Majority): সংখ্যায় বেশি এবং সাধারণত সমাজের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অধ্যক্ষতা বা প্রভাবশালী অবস্থানে থাকা গোষ্ঠী।
উদাহরণ
ভারতীয় সমাজে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং মুসলিম, খ্রিস্টান ইত্যাদি ধর্মীয় গোষ্ঠী সংখ্যালঘু।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠী সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচিত হয়।
সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অধিকারের সমুন্নতি এবং সুরক্ষার জন্য সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
আপনি যদি নির্দিষ্ট কোন প্রসঙ্গে বা দেশে সংখ্যালঘু বনাম সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিষয়ে জানতে চান, আমি আরও বিস্তারিত তথ্য দিতে পারি।
ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা।
Ans: ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা হলো এমন একটি নীতি বা দর্শন যেখানে রাষ্ট্র বা সরকার কোন নির্দিষ্ট ধর্মকে অনুসরণ করে না এবং সব ধর্মের প্রতি সমান আচরণ করে। এতে ধর্ম এবং রাষ্ট্র সম্পূর্ণ আলাদা থাকে। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মের সাথে সম্পর্কহীন থাকা, অর্থাৎ রাষ্ট্র কোনো ধর্মকে প্রাধান্য দেবে না, ধর্মীয় বিশ্বাস বা প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করবে না এবং সব নাগরিকের জন্য ধর্ম পালন ও প্রচারের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে।
ধর্মনিরপেক্ষতার মূল উদ্দেশ্য হলো একটি সমাজ বা রাষ্ট্রে ধর্মীয় বৈষম্য না থাকা, সকল ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করা এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধর্মের বাইরে তথ্য ও বস্তুনিষ্টতার ভিত্তি রাখা। এটি ধর্মবিরোধী নয়, বরং ধর্ম থেকে রাষ্ট্র ও নৈতিকতার বিচ্ছিন্নতার ধারণা।
উদাহরণস্বরূপ, ভারতীয় সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে সব ধর্মকে সমান মর্যাদা দেওয়া এবং কেউ ধর্ম পালনে বাধ্য নয়। এটি নিশ্চিত করে যে সরকার কোন ধর্মের পক্ষে হবে না এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকবে।
সহজ কথায়, ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে "ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার"—যেখানে সকল ধর্মের প্রতি সমতা এবং মানবাধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ভারতে বিছন্নতা বাদী আন্দোলন সম্পর্কে লেখা।
Ans: ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বলতে মূলত বোঝানো হয় ভারতের এক বা একাধিক রাজ্যের ভারত প্রজাতন্ত্র থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার চেষ্টা বা তার জন্য জনগণের আন্দোলন। এই ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সময়ে সময়ে দেখা গেছে, বিশেষত উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, আসাম, নাগাল্যান্ড এবং কাশ্মীর অঞ্চলে এসব আন্দোলন সক্রিয় ছিল।
এই আন্দোলনগুলি নানা কারণে হয়, যেমন ভাষা, সংস্কৃতি, জাতিগত এবং রাজনৈতিক কারণে। কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিজেদের আলাদা রাষ্ট্র চাইত; অন্যরা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানাত। পাঞ্জাবের খালিস্তান আন্দোলন ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে সক্রিয় ছিল, কিন্তু বর্তমান সময়ে অনেকটায় স্থানীয় জনসমর্থনের অভাব দেখা দিয়েছে।
ভারত সরকার এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন করতে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করে থাকে, যেমন ১৯৮৯ সালে শুরু হওয়া সশস্ত্র বিদ্রোহের পর বিভিন্ন রাজ্যে তা প্রয়োগ করা হয়েছিল। এর ফলে দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার, সেনা অভিযান ও মানুষের ওপর সেনা অত্যাচার প্রভৃতি পরিস্থিতি জনসমাজে গভীর প্রভাব ফেলে।
সেনাবাহিনীর মোতায়েন ও দমন-পীড়নের কারণে আন্দোলনগুলো অনেক সময় সাম্প্রদায়িক রূপ নিয়েছে এবং এর ফলে সামাজিক সমস্যা বেড়ে গেছে। তবে অধিকাংশ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর স্থানীয় জনসমর্থন কমে যাওয়ায় এখন অনেকগুলো আন্দোলন উল্লেখযোগ্য স্তরে রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে পারছে না।
সরকার এই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও সংহতি বজায় রাখার কথা বললেও, এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও বারবার উঠে এসেছে।
নির্বাচন কমিশনের কার্যকারিতা।
Ans: নির্বাচন কমিশনের কার্যকারিতা হলো একটি সংবিধানিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা। প্রধান কার্যক্রমগুলো হলো:
নির্বাচন পরিচালনা: সাধারণ, প্রাদেশিক ও স্থানীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য সকল নির্বাচনী প্রক্রিয়া সংগঠিত ও নিয়ন্ত্রণ করা।
ভোটার তালিকা প্রস্তুতি: ভোটারদের সঠিক তালিকা তৈরী ও নিয়মিত হালনাগাদ করা।
কেন্দ্রসমূহ নির্ধারণ: নির্বাচনী কেন্দ্রের পরিচালনা ও বিন্যাস করা।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন: রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের নিবন্ধকরণ ও মানদণ্ড প্রয়োগ করা।
নির্বাচন কমিটি নিয়োগ: নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আধিকারিক ও কর্মী নিয়োগ।
ভোট গণনা ও ফল ঘোষণা: ভোট গণনা নির্ভুলভাবে করা এবং ফল প্রকাশ করা।
নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি: নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগ ও মামলা দেখাশোনা।
নির্বাচন আইন প্রয়োগ ও পরামর্শ: নির্বাচন সংক্রান্ত আইন ও বিধান বাস্তবায়নে সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান।
এই কার্যক্রমগুলি নিশ্চিত করে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়।
সংবিধানিক সংশোধন পদ্ধতি।
Ans: সংবিধানিক সংশোধন পদ্ধতি বলতে বোঝায় বাংলাদেশের সংবিধানে কোন ধরণের পরিবর্তন আনা বা সংবিধান সংশোধনের জন্য যেসব আইনগত বিধি ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।
বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি প্রধানত নিম্নরূপ:
সংশোধনের প্রস্তাব:
সংবিধানে পরিবর্তন আনার জন্য সংশোধনী বিল সংসদের যে কোন সদস্য দ্বারা প্রস্তাব করা যেতে পারে।
সংসদে পাস:
সংবিধান সংশোধনের বিল সাধারণ আইন পাসের চেয়েও কঠোর পদ্ধতিতে পাস হতে হয়। সংশোধনী বিল সংসদে পাস হতে হলে পার্লামেন্ট সদস্যদের সর্বনিম্ন ২/৩ এর সংখ্যাগরিষ্ঠতার সম্মতি প্রয়োজন।
রাষ্ট্রপতির অনুমোদন:
সংশোধনী বিল সংসদে পাস হয়ে গেলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয় অনুমোদনের জন্য। সাধারণত রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দেন, কিন্তু অনুমোদন বিলম্বিত হলেও সংশোধনী বিল কার্যকর হয়।
প্রযোজ্য বিধি:
সব ধরনের সংশোধন একই পদ্ধতিতে হয় না। সংবিধানের ২/৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা পাস করার প্রয়োজন এমন কিছু মৌলিক ধারা যেমন: দেশের সংরক্ষণ, ধর্ম, ভাষা ইত্যাদি ধারা সংশোধন কঠোর। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে অন্যান্য নিয়ম থাকতে পারে।
সারসংক্ষেপে, বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের ২/৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আবশ্যক এবং সংশোধনী প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে কার্যকর হয়।
আপনি যদি চান, আমি বিস্তারিত ধারা ও সংশোধনের নিয়মসূত্রও বলতে পারি।